যাকাত সম্পর্কে সুয়াল-জাওয়াব

জাওয়াব: যারা মালিকে নিছাব বা ছাহিবে নিছাব, তাদের উপর যাকাত ফরয। আর মালিকে নিছাব বা ছাহিবে নিছাব বলতে বুঝায়, যে মুসলমান স্বাধীন, বালেগ বা বালেগার নিকট ‘হাওয়ায়েজে আছলিয়াহ (নিত্যপ্রয়োজনীয় আসবাবপত্র, মাল-সামানা) বাদ দিয়ে কর্জ ব্যতীত নিজ মালিকানাধীনে সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ অথবা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রৌপ্য বা তার সমপরিমাণ মূল্য পূর্ণ এক বছর থাকে, তাহলে তার উপর যাকাত ফরয। অর্থাৎ নিম্ন বর্ণিত দশ প্রকার গুণ সম্পন্ন লোকের উপর যাকাত ফরয-
(১) মুসলমান হওয়া (২) বালেগ হওয়া। (৩) জ্ঞানবান হওয়া। (৪) স্বাধীন হওয়া। (৫) নিছাব পরিমাণ মালের মালিক হওয়া (৬) পূর্ণ নিছাবের একক মালিকানা থাকা। (৭) নিছাব করজমুক্ত হওয়া (৮) নিছাব পরিমাণ মাল হাওয়ায়িজে আছলিয়ার অতিরিক্ত হওয়া। (৯) মাল বর্ধনশীল হওয়া। (১০) নিছাবের মালের বৎসর শেষ হওয়া। (দলীলসমূহ : আলমগীরী, আইনুল হেদায়া, বাহরুর রায়েক, ফতওয়ায়ে আমিনীয়া ইত্যাদি।)

জাওয়াব: সাধারণত তিন প্রকার সম্পদে যাকাত ফরয: ১. মালে নকদ। ২. মালে তিজারত। ৩. সায়েমা। ‘মালে নকদ’ হলো- স্বর্ণ, চান্দি ও টাকা-পয়সা ইত্যাদি নিছাব পরিমাণ এক বৎসর কারো মালিকানাধীনে থাকলে, তার উপর যাকাত ফরয হবে। ‘মালে তিজারত’ বা ‘ব্যবসার মাল’ অর্থাৎ যে মালের ব্যবসা করা হয়, তা যদি নিছাব পরিমাণ হয় এবং এক বৎসর কারো মালিকানাধীনে থাকে, তবে তার উপর যাকাত ফরয হবে। ‘ছায়েমা হলো’- যে কোনো গৃহপালিত পশু অর্থাৎ গরু, মহিষ, ছাগল, বকরী, ভেড়া, উট, দুম্বা, মেষ ইত্যাদি যদি চারণভুমিতে ছয় মাসের অধিককাল বিচরণ করে অর্থাৎ ফ্রি খায়, আর তা যদি নেছাব পরিমাণ হয়, তবে তার মালিকের উপর যাকাত ফরয হবে। (আলমগীরী, শামী)
যাকাতযোগ্য সম্পদের বিবরণ:
* সোনা, রূপার গহনা, বার বা গিনি কয়েন-এর বর্তমান বাজার মূল্য।
* সোনা/রূপা/মূল্যবান পাথর/হিরক বা মণিমুক্তা মিশ্রিত অলঙ্কার অর্থাৎ এসব ক্ষেত্রে শুধুমাত্র সোনা বা রূপার মূল্য।
* ব্যবসার জন্য ক্রয়কৃত খালি প্লটের ক্রয় মূল্য
* নিজ ব্যবহার্যের অতিরিক্ত বাড়ি/ফ্ল্যাট রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বাদে বাৎসরিক আয় (যদি সঞ্চিত থাকে)।
* যানবাহন : ব্যবসায় ব্যবহৃত রিক্সা, ট্যাক্সি, লরি, সিএনজি, গাড়ি, বাস-ট্রাক, ট্রলার, লঞ্চ, নৌকা ইত্যাদি রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বাদে বাৎসরিক আয় (যদি সঞ্চিত থাকে)
* সাবালকের বিভিন্ন সঞ্চয় বা যাকাতযোগ্য সম্পদের মূল্য।
* প্রাইজবন্ড সবগুলোর ক্রয় মূল্য
* ব্যক্তিগত বা পোষ্যের নামের বীমা অর্থাৎ বীমায় জমাকৃত মোট প্রিমিয়াম।
* নিজ বা পোষ্যের ডিপিএস বা এ ধরনের যে কোনো সঞ্চয় অর্থাৎ জমাকৃত মোট অর্থ।
* বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র অর্থাৎ সবগুলো সঞ্চয় পত্রের ক্রয় মূল্য।
* বন্ড (ব্যাংক বা অর্থলগ্নী প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন নামের যে কোনো বন্ড) অর্থাৎ সবগুলো বন্ডের ক্রয়কৃত মূল্য।
* বিভিন্ন মেয়াদী আমানত-এর জমাকৃত মোট অর্থ।
* প্রভিডেন্ট ফান্ডে জমাকৃত মূল টাকা। অর্থাৎ প্রভিডেন্ট ফান্ডে জমাকৃত মূল টাকা যখন থেকে নিছাব পরিমাণ হবে তখন থেকে যাকাত গণনা করতে হবে। এরপর পূর্ণ ১ বৎসর হলে নিছাব যদি থাকে তাহলে তার যাকাত দিতে হবে।
* সিডিবিএল বা স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত শেয়ার হোক অথবা সিডিবিএল বা স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত না হোক যাকাত দেয়ার নিয়ম হচ্ছে- শেয়ার ক্রয় করা হয়েছে কম মূল্যে, যাকাত প্রদানের সময় শেয়ারের মূল্য বেশি, এক্ষেত্রে ক্রয় মূল্যে যাকাত দিতে হবে আর যদি বিক্রি করে দেয় তবে বিক্রিকৃত মোট টাকার যাকাত দিতে হবে। আবার শেয়ার ক্রয় করা হয়েছে বেশি মূল্যে যাকাত প্রদানের সময় শেয়ারের মূল্য কম, এক্ষেত্রে যাকাত প্রদানের সময়কার মূল্য ধরতে হবে।
* অংশিদারী বা যৌথ মালিকানার যাকাতযোগ্য সম্পদ অর্থাৎ যৌথভাবে যাকাত আদায় না হলে নিজ অংশের ক্রয় মূল্য।
* বিদেশের সকল যাকাতযোগ্য সম্পদ (যদি থাকে) তার ক্রয় মূল্য।
* ক্যাশের/হাতের বা সঞ্চিত নগদ অর্থ। সেভিংস (সঞ্চয়ী) অ্যাকাউন্ট অর্থাৎ নির্দিষ্ট তারিখের ব্যালেন্স।
* কারেন্ট (চলতি) অ্যাকাউন্ট অর্থাৎ নির্দিষ্ট তারিখের ব্যালেন্স।
* কারখানায় ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য ক্রয়কৃত কাঁচামালের মজুদ অর্থাৎ ক্রয়কৃত মালের ক্রয় মূল্য।
* কারখানায় ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে প্রস্তুতকৃত তৈরি মালের মজুদ অর্থাৎ কোম্পানির নির্ধারিত ক্রয় মূল্য।
* ব্যবসার জন্য ক্রয়কৃত মালের মজুদ অর্থাৎ মজুদ মালের ক্রয় মূল্য।
* পোল্ট্রি ফার্মের ব্রয়লার বড় করে বিক্রির জন্য পালিত হলে অর্থাৎ ফার্মের হাস-মুরগির ক্রয় মূল্য।
* ব্যবসার জন্য পালিত গরু/মহিষ/ছাগল/ভেড়া/ঘোড়া/উট দুম্বা থাকলে অর্থাৎ সব পশুর ক্রয় মূল্য।
* ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে চাষকৃত মাছের ক্রয় মূল্য (যদি সঞ্চিত থাকে)
* প্রদানকৃত ঋণের অথবা ধার দেয়া টাকা অর্থাৎ প্রদানকৃত ঋণ বা ধার দেয়া টাকা ফেরত পাওয়া সুনিশ্চিত তার মোট পরিমাণ।
উল্লেখ্য, উপরোক্ত বর্ণনায় উল্লেখিত হয়নি এমন যাকাতযোগ্য সম্পদ যাকাতদাতার মালিকানাধীন থাকলে তাও হিসাবে আনতে হবে।
জাওয়াব : যাকাত দাতার নিকট যে ক্যরেটর স্বর্ণ রয়েছে, সে ক্যারেটের স্বর্ণের মূল্যে যাকাত আদায় করতে হবে। একাধিক ক্যারেটর স্বর্ণ থাকলে সে অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণ করে যাকাত আদায় করতে হবে।
জাওয়াব: সোনা-চান্দির মধ্যে খাঁদ থাকলে এবং সোনা-চান্দির পরিমাণ বেশি হলে একে সোনা-চান্দি হিসেবেই যাকাত দিতে হবে, যদি তা নিছাব পরিমাণ হয়। আর যদি নিছাব পরিমাণ না হয়, তবে এর মূল্য হিসাব করে অন্যান্য মালের সাথে মিলিয়ে নিছাব পূর্ণ হলে যাকাত আদায় করতে হবে। যদি সোনা-চান্দি কম হয় ও খাঁদ বেশি হয় এবং উভয় মিলে যদি এক নিছাব বা তার চেয়ে বেশি হয়, তবুও যাকাত দিতে হবে। খাঁদযুক্ত সোনা-চান্দি এত কম হয় যে, উভয়টি মিলেও এক নিছাব হয় না কিন্তু তার দ্বারা ব্যবসা করা হয়, তবে তা ব্যবসার মালের নিছাব হিসাবে হলে যাকাত দিতে হবে; অন্যথায় যাকাত দিতে হবে না। (দুররুল মুখতার)
জাওয়াব: কৃষিজাত পণ্য-ফল ও ফসলের যাকাতকে ইসলামী পরিভাষায় ‘উশর’ বলে। বাংলাদেশের জমি উশরী কিনা তা নিয়ে মত পার্থক্য থাকলেও হক্কানী আলিম-উলামাগণের ফতওয়া হলো উশর প্রদানের পক্ষে।
উশরের হিসাব ও শর্ত:
ইমামে আয’ম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মত হলো, কম বেশি যাই হোক উশর আদায় করতে হবে। জমির খাজনা বা কর দিলেও উশর আদায় করতে হবে। বছরে একাধিক ফসল উৎপন্ন হলে প্রতি ফসলেই ‘উশর’ দিতে হবে।
জাওয়াব: যে জমির খাজনা দেয়া হয়, উক্ত জমির ফসলের যাকাত বা উশর দিতে হবে। এমনকি উক্ত জমি বিক্রি করলেও বিক্রিত টাকা নিছাব পরিমাণ হলে এবং উক্ত টাকা পূর্ণ এক বছর হাতে থাকলে অথবা অন্যান্য টাকার সাথে মিলিয়ে নিছাব পূর্ণ হলে তার যাকাত দিতে হবে। (ফতওয়ায়ে আলমগীরী)
জাওয়াব: উশর বা জমির যাকাত আদায় করার জন্য বৎসর পূর্ণ হওয়া ও নিছাব পরিমাণ মাল হওয়া শর্ত নয়। বরং একই জমিতে প্রতি মৌসুমে যে পরিমাণ ফসলই হোক তার দশ ভাগের একভাগ উশর আদায় করা ফরয। তবে যদি পরিশ্রম করে ফসল ফলানো হয়, তবে বিশ ভাগের এক ভাগ ফসলের উশর বা যাকাত দিতে হবে। (দুররুল মুখতার)
জাওয়াব: যাকাত বছরান্তে ফরয এবং বছরান্তে যাকাতের হিসাব করা ওয়াজিব। হিজরী সন বা আরবী মাসের যে কোনো একটি তারিখকে যাকাত হিসাবের জন্য নির্ধারিত করতে হবে। ফসলী বা ইংরেজি সন হিসাব করলে তা শুদ্ধ হবে না। হিসাবের সুবিধার্থে পহেলা রমাদ্বান শরীফ-এ যাকাত হিসাব করা যেতে পারে। মহান আল্লাহ পাক তিনি রমাদ্বানের রহমতের কারণে এ সময় সত্তর গুণ বেশি নেকী দান করেন। যাকাতযোগ্য সকল সম্পদ পণ্যের বেলায় এই শর্ত আরোপিত। কিন্তু কৃষিজাত ফসল, মধু, খনিজ সম্পদ ইত্যাদির ক্ষেত্রে বছরান্তের শর্ত নাই। প্রতিটি ফসল তোলার সাথে সাথেই যাকাত অর্থাৎ উশর আদায় করতে হবে। যদি কারো অতীত যাকাত অনাদায়ী বা অবশিষ্ট থাকে, তাহলে তা ঋণের মধ্যে গণ্য হবে। চলতি বছরে যাকাত আদায়ের পূর্বেই অনাদায়ী কাযা যাকাত আদায় করতে হবে। তবে কারো পক্ষে যদি সম্ভব না হয় তবে চলতি বছরেরটা আদায় করবে আর পিছনেরটা অল্প অল্প করে আদায় করে দিবে। (আলমগীরী)
জাওয়াব: যখন থেকে নেছাব হয় তখন থেকে বছর শুরু হয়। ইচ্ছে করলে সে এটাকে আগ পরেও করতে পরে যোগ দিয়ে। যদি কেউ কোন ব্যবসা ৬ মাস করে কিন্তু তার কনো পুজিই নাই তাহলে তার কোন নিছাব হবে না। নিছাব বাড়ে কমে, কমে মানে এই নয় যে একে বারে মাইনাস হয়ে যায়। তাহলেতো নিছাব বাতিল হয়ে যাবে। এখন নিছাব যদি ধরা হয় ৫০-৬০হাজার টাকা, ১০-১৫ হাজার, ২০-৩০ হাজার টাকা, অথবা ৩০ হাজার টাকা ধরে নিলাম যাকাত ফরয হয়। এখন তার বাড়তে বাড়তে লাখ টাকা হয়ে গেলো, আবার কমতে কমতে ৫০ হাজার টাকা হয়ে গেলো, এখন যদি মাইনাস হয়ে যায, পুজি তার নাই, একে বারে শেষ ০ হয়ে গেলো তাহলে তার নিছাব বাতিল হয়ে গেলো। নিছাবটা তার থাকতে হবে। নিছাবই যদি না থাকে সব দান করে দিলো তাহলে তো নিছাব শেষ হয়ে গেলো। আবার নতুন করে ধরতে হবে। অথবা সব খরচ করে ফেললো। একটা লোকের অনেক টাকা ছিলো সে জায়গা কিনে ফেললো, একটা বাড়ি কিনে ফেললো তাহলে পুরা নিছাব শেষ হয়ে গেলো। এখন যাকাত দিতে হবে না। আবার নিছাব যোগাড় হলো তখন নতুন করে শুরু হবে। মাইনাস হয়ে গেলো সেটা তো দিতে হবে না। যখন নেছাবের কম বেশি হয় তখন সেটা ঠিক থাকবে, বাড়লে বাড়তি দিতে হবে। আর কমলে কম দিতে হবে। আর নিছাবের চেয়ে নিচে চলে গেলে সেটা বাদ হয়ে যাবে। একটা লোক মালের ব্যবসা করবে। ধরলাম সে ১০ লাখ টাকার জিনিস কিনলো। এখন এই মালের দাম ২০ লাখ টাকা হয়ে গেছে। পুজি ছিলো ১০ লাখ। ২০ লাখ হলেই সে আর ২০ লাখ টাকা পাচ্ছে না। কারণ যদি মালের দাম ৫ লাখ টাকা হয়ে যায় তাইলে কি করবে। বিক্রি করার আগ পর্যন্ত কিনা দামই থাকবে। যখন বিক্রি করে ফেললো, বেশি দাম পেলো তখন বেশি দামের উপরই যাকাত দিতে হবে। মাল কিনলো ১০ লাখ টাকা দিয়ে কিন্তু এটা এখন বাজারে ৫ লাখ টাকা হয়ে গেছে তাহলে তাকে ৫ লাখ টাকার উপরই যাকাত দিতে হবে। যেহেতু এটা বাজার দরের উপর নির্ভর করে। যেমন: একটা লোক স্বর্ণের ব্যবসা করে এখন স্বর্ণ যে ব্যবসা করে তার যাকাত এর এক হুকুম আর স্বর্ণ যে ব্যবহার করে তার আরেক হুকুম। দুই জনের দুই হুকুম। একটা লোক স্বর্ণ কিনলো ১০ কোটি টাকার বাজার দর এটার দাম আছে ১৪ কোটি টাকা বা ১৫ কোটি টাকা, তাহলে সে ১০ কোটি টাকার যাকাত দিবে। বিক্রিত দামে না কিনা দামে। আর একটা লোক স্বর্ণ কিনলো সে ব্যবহার করে তার ১০০ বড়ি স্বর্ণ আছে। ১০০ বড়ি স্বর্ণ কিনেছিলো ১০ লাখ টাকা দিয়ে এখন এটা ৫০ লাখ টাকা হয়েছে। তাহলে তাকে ৫০ লাখ টাকার উপর যাকাত দিতে হবে। দুইটার দুই হুকুম। এই জিনিসটা খুব গুরুত্ব পূর্ণ। যে কিনলো তার পুজিতো সেটা। এখন বিক্রি করলে, এখন ৫ লাখ টাকার জিনিস সে ২৫ লাখ টাকা বিক্রি করলে তখন তাকে ২৫ লাখ টাকার উপর যাকাত দিতে হবে। কারণ সে তো নিছাব আগেই হয়েছে। লাভ লস দুটাই হিসাব করতে হবে। একটা হিসাব করলে হবে না। দুটাই হিসাব করতে হবে। দুইটা হিসাব করলে তাহলে বুঝতে সহজ। যেকোনো জিনিস যেমন: কেও কোন মুরগির ফার্ম করলো। সেখানে সে ৫ লাখ টাকার জিনিস কিনলো এই ৫ লাখ টাকা তার পুজি। এটার জন্য কি খরচ করলো না করলো সেটা তো এখানে আসবে না। একটা ঘর বানালো। ঘরের তো যাকাত দিতে হবে না। যেই মালটা দিয়ে ব্যবসা করবে সেটার যাকাত দিতে হবে। একটা লোক যেই মালগুলো দিয়ে বেচা কেনা করে সেটার যাকাত দিতে হবে। এখন মুরগির ফার্ম করতে গিয়ে আমি ১ কোটি টাকার ঘর বানালো সেটার যাকাত দিতে হবেনা। বিল্ডিং তো বিল্ডিং এর জাগায় রয়ে গেছে। যদি বিল্ডিং বেচা কেনা করে তাহলে সেটার যাকাত দিতে হবে। এখানে পুজিটা কি আছে। এখানে পুজি হচ্ছে ১০ লাখ টাকার মুরগি। এটার উপর যাকাত দিতে হবে। বেশি বিক্রি করলে বেশি যখন বিক্রি করবে তখন দিতে হবে। যদি মাইনাস হয়ে যায়। দাম কমে যায়। তখন ওটার উপরই যাকাত দিতে হবে।
জাওয়াব: রিয়েল এস্টেট এর ব্যবসা করে তার কিছুই নাই। সে আরেক জনের জাগার সাথে চুক্তি করে বাড়ি বানিয়ে তার পর সে বেচা কেনা করে। এখন তার ব্যক্তগত কতো পুজি আছে সেটা দেখতে হবে। এখানে ফ্লাট এর দাম দেখা যাবে না। একটা লোক ৫০ লক্ষ টাকা নিয়ে রিয়েল এস্টেট এর ব্যবসা শুরু করলো। এখন যে ১০ জন মালিকের সাথে চুক্তি করলো জাগা নিলো, বাড়ি করলো, ঘর করলো। এখন সে বিক্রি করবে লাভ করবে। এখন ঐ ফ্লাটের উপর তার যাকাত হবেনা তার পুজি কতো সেটার উপর হবে। সে ৫০ লক্ষ টাকা নিয়োগ করছে, এটা তার ব্যবসার মাল। এটার উপর তাকে- এখন সে যদি ফ্লাট গুলো করতে ৫ কোটি টাকা লোন নিলো। লোন নিয়ে সে ফ্লাট গুলো করতে থাকলো। তার মূল পুজি হচ্ছে ৫০ লক্ষ টাকা। এখন তার যাকাত ৫০ লাখ টাকারই দিতে হবে। ঐ ৫ কোটি টাকার জন্য ৫০ লক্ষ টাকা মাইনাস হবে না। ঐ ৫ কোটি টাকা হচ্ছে তার বিল্ডিং গুলি আছে। ঐ বিল্ডিংগুলো সে যেহেতু বানায়ে বিক্রি করবে সেটাতো তার মালিকানা বা অধিনে না। কারণ যে কোন কিছুর যাকাত দিতে হলে ঐটা তার মালিকানায় ১ বছর থাকতে হবে। এখন ঐটা তৈরি করা হলে বিক্রি করে যে লাভটা হবে সে লাভটা থেকে, ঐ লাভটা যদি ১ বছর থাকে তাহলে তার নিছাব হবে।
জাওয়াব: না! মাল-ছামান বেশি হলে যাকাত দিতে হয়না। কুরবানীর সময় ছদকাতুল ফিতর দিতে হয়। মাল-ছামান বেশি থাকলে যেমন, কপড় তিন সেট থাকতে পারে বেশি থাকলে, আবার আসবাবপত্র বেশি থাকলে, ফ্রিজ ১টা থাকতে পারে বেশি থাকলে তখন যাকাত আদায় করতে হবে না। কুরবানীর সময় কুরবানী দিতে হবে এবং ছদকাতুল ফিতর আদায় করতে হবে।
জাওয়াব : বাসস্থানের জন্য অথবা চাষাবাদ করার জন্য যদি জমি কেনার জন্য টাকা দিয়ে থাকে তাহলে সে টাকার যাকাত দিতে হবে না। উল্লেখ্য, টাকা গ্রহীতা যদি জমি না দিয়ে টাকা ফেরত দেয়; আর সে টাকা যদি নিছার পরিমাণ হয় এবং বছর পূর্ণ হয় তাহলে সে টাকারও যাকাত দিতে হবে। আর যদি ব্যবসার উদ্দেশ্যে জমি কেনার জন্য টাকা দিয়ে থাকে তাহলে সে টাকার অবশ্যই যাকাত আদায় করতে হবে। জমিদাতা যদি জমি না দিয়ে টাকা আটকে রাখে তবে টাকা দাতা ইচ্ছা করলে তখনও যাকাত আদায় করতে পারে অথবা যখন জমি অথবা টাকা পাওয়া যাবে তখন যত বছর এ অবস্থায় অতিবাহিত হয়েছে ততো বছরেরই যাকাত অবশ্যই আদায় করতে পারবে।
জাওয়াব : যে টাকা ব্যাঙ্কে আছে তার যাকাত যেমন আদায় করতে হবে এবং তেমন মার্কেটে যত টাকার প্রডাক্ট আছে তারও যাকাত আদায় করতে হবে। আর যে টাকা বকেয়া হিসেবে দেয়া আছে তা যদি দেনাদাররা স্বীকার করে যে, আদায় করে দিবে তবে তা হস্তগত হওয়ার পূর্বেও আদায় করতে পারবে। অন্যথায় হস্তগত হওয়ার পরও আদায় করতে পারবে। আর দেনাদার যদি দেনা অস্বীকার করে অথবা টাকা দিতে অস্বীকার করে তবে সে টাকার যাকাত দিতে হবে না।
জাওয়াব : হ্যাঁ, বীমার প্রীমিয়ামের উপর যাকাত হবে। অর্থাৎ ব্যক্তিগত কিংবা পোষ্যের নামে বীমায় জমাকৃত মোট প্রিমিয়ামের যাকাত আদায় করতে হবে। যদি নিছাব পূর্ণ হওয়ার পর এক বছর অতিবাহিত হয়।
জাওয়াব : যারা সরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বা চাকুরীজীবি তারাই এ টাকার মালিক। কেননা, এ টাকা তাদেরই বেতন-ভাতা থেকে কর্তিত জমা টাকা। তাদেরকে এককালীন সুবিধা দেয়ার জন্য এ ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ টাকা যখন প্রয়োজন তখনই তোলা না গেলেও এ টাকার মালিকানা কিন্তু বাদ যায় না। এ টাকার মালিক সে নিজেই থাকে। এটা অনেকটা (সুদমুক্ত) সেভিংস একাউন্টের মতো। সেভিংস একাউন্ট থেকে কারেন্ট বা চলতি একাউন্টের মতো যখন ইচ্ছা তখন টাকা উত্তোলন করা যায় না। নির্দিষ্ট সময়ে টাকা উত্তোলন করতে হয়। এর আরো একটা উদাহরণ হলো, পাওনা টাকার মতো। পাওনাদারের কাছে টাকা পাওনা থাকা সত্ত্বেও, যখন তখন টাকা পাওয়া যায় না। তাই বলে কি পাওনা টাকার যাকাত দিতে হবে না? অবশ্যই যাকাত দিতে হবে। যদি নিছাব পূর্ণ হয় এবং বছর পুরা হয়। কাজেই, মালিকানা যেহেতু বাদ যায় না; বরং টাকা যেহেতু তারই থাকে সুতরাং এ টাকা নিছাব পরিমাণ হলে এবং এক বৎসর অতিবাহিত হলে তাকে অবশ্যই এর যাকাত দিতে হবে।
জাওয়াব : সাধারণত সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বা চাকুরীজীবিকে তাদের চাকুরী শেষে এককালীন সুবিধা দেয়ার জন্য জিপিএফ অর্থাৎ প্রভিডেন্ট ফান্ড-এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন কেউ যদি কোনো প্রয়োজনে সেখান থেকে আগে টাকা নেয়, সেজন্য তাকে তা আবার কিস্তিতে পরিশোধ করতে হয়। এ নিয়ম এজন্য করা হয়েছে যেন তাকে চাকুরী শেষে যে পরিমাণ সুবিধা দেয়ার কথা সেটা পুরা করা যায়। আসলে শরয়ী অর্থনীতি ব্যবস্থা চালু না থাকার কারণে একেক সরকার একেক নিয়ম চালু করে থাকে। কিন্তু কথা হলো, যদিও চাকুরীর মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বে টাকা নেয়ায় শর্ত হিসেবে তাকে পূর্বের উত্তোলনকৃত টাকা কিস্তিতে জমা দিতে হচ্ছে, এতে কিন্তু তার জমাকৃত টাকার মালিকানা রহিত হচ্ছে না; বরং জমাকৃত টাকার মালিকানা তারই থাকছে, যা চাকুরী শেষে সে প্রাপ্ত হবে। কাজেই, প্রভিডেন্ট ফান্ডে প্রতিমাসে জমাকৃত কিংবা উত্তোলনকৃত টাকা কিস্তিতে জমাকৃত টাকার পরিমাণ নিছাব পরিমাণ হলে তার যাকাত আদায় করতে হবে।
জাওয়াব : ফিক্সড ডিপোজিড সেটা নিছাব পরিমাণ হওয়ার পর এক বৎসর অতিবাহিত হলেই সেটার উপর যাকাত ফরয হবে এবং তা আদায় করতে হবে। সেটা উত্তোলন করা যাক বা না যাক। যাকাত ফরয হওয়ার জন্য মালিকানা শর্ত।
জাওয়াব : নিজের থাকার জন্য হোক অথবা ভাড়া দেয়ার জন্য হোক- এ প্রকার কোনো স্থাবর সম্পত্তির যাকাত দেয়ার নিয়ম শরীয়তে নেই। তবে কেউ যদি অতিরিক্ত বাড়ী, ঘর অথবা অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া দেয়, তাহলে রক্ষণাবেক্ষণের খরচের পর অতিরিক্ত যে ভাড়ার টাকা জমা থাকবে তা যদি নিছাব পরিমাণ হয় এবং এক বছর অতিবাহিত হয়; তখন উক্ত টাকার যাকাত আদায় করতে হবে। অন্যথায় যাকাত ফরয হবে না বা দিতে হবে না। তবে যদি ব্যবসার জন্য হয় তাহলে তার মূল্য হিসেব করে সে টাকার যাকাত দিতে হবে। যদি তা নিছাব পরিমাণ হয় এবং এক বছর পূর্ণ হয়।
জাওয়াব : ব্যবসার উদ্দেশ্যে যে জমি কেনা হয়েছে সেই জমির কেনা মূল্যের উপর যাকাত আদায় করতে হবে।
জাওয়াব: স্বামী-স্ত্রীর সম্পদ একই পরিবারের গণ্য হলেও মালিকানা ভিন্ন তাই পৃথকভাবে যাকাত আদায় করতে হবে। স্ত্রীর যদি অলঙ্কার ব্যতীত অন্য কোনো সম্পদ না থাকে তবে স্ত্রীর হাত খরচের টাকা বাঁচিয়ে বা কিছু অলঙ্কার বিক্রি করে যাকাত আদায় করতে হবে। অলঙ্কারের যাকাত স্ত্রীর পক্ষে স্বামী আদায় করলেও যাকাত আদায় হয়ে যাবে।
জাওয়াব: না! মাল-ছামান বেশি হলে যাকাত দিতে হয়না। কুরবানীর সময় ছদকাতুল ফিতর দিতে হয়। মাল-ছামান বেশি থাকলে যেমন, কপড় তিন সেট থাকতে পারে বেশি থাকলে, আবার আসবাবপত্র বেশি থাকলে, ফ্রিজ ১টা থাকতে পারে বেশি থাকলে তখন যাকাত আদায় করতে হবে না। কুরবানীর সময় কুরবানী দিতে হবে এবং ছদকাতুল ফিতর আদায় করতে হবে।জাওয়াব: যাকাত দিতে হয় না এ সম্পদগুলো হচ্ছে-
* সাংসারিক প্রয়োজনে ব্যাংক বা কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে গৃহীত ঋণ অর্থাৎ ঋণের বর্তমান দায়দেনার পরিমাণ।
* বাকিতে বা কিস্তিতে পরিশোধের জন্য দেনা অর্থাৎ পরিশোধিত কিস্তি কর্তনের পর বর্তমান দেনার পরিমাণ।
* সাংসারিক প্রয়োজনে ব্যক্তিগত ধার/দেনা/করজে হাসানা-এর পরিমাণ
* স্ত্রীর অপরিশোধিত মোহরানার দেনা (যদি স্ত্রীর পাবার তাগাদা থাকে) অর্থাৎ দেনা/বকেয়ার পরিমাণ।
* সরকার ও প্রতিষ্ঠানের পাওনা: জমির খাজনা, ওয়াসা, বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিল, পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনের ট্যাক্স, অধীনস্থের বেতন, ছেলেমেয়ের স্কুল কলেজের বকেয়া বেতন (যদি থাকে) ইত্যাদি এসবের নির্ধারিত তারিখের মোট দেনা/বকেয়ার পরিমাণ।
জাওয়াব: যাকাততো সারা মাসই দিতে পারে। এটা প্রত্যেকের একটা তারিখ নির্দিষ্ট করা উচিত। এটা যদি করা হয় যেমন: পহেলা রমাদ্বান শরীফ। এর আগেও করতে পারে আবার পরেও করতে পারে। কোন অসুবিধা নাই। কারণ যাকাত আগেও দিতে পারে আবার পরেও দিতে পারে। দশ বৎসরের যাকাত সে আগেও দিতে পারে কোন অসুবিধা নাই। তবে একটা ফিক্সড তারিখ থাকলে সে যদি মনে করে যে রমাদ্বান শরীফ এর পহেলা তারিখ এ তার বৎসর শুরু হলো এবং শাবান মাসে তার বৎসর শেষ হয়ে গেলো। তখন সে হিসাব করে আগে থেকে রেডি করতে তাহলে সে রমদ্বান শরীফ এ দিতে পরে। আবার ইচ্ছে করলে সে শাবান মাসে দিতে পারে হিসাবটা রমাদ্বান শরীফ করলো। কম বেশি হলে সেটা আবার দিয়ে দিলো। যাকাতের জন্য এমন কোন শর্ত নেই যে আগে পরে দেয়া যাবে না। যাকাত আগে পরে দেয়া যাবে। সে তারিখ ফিক্সড করে সে অনুযায়ী যাকাত দিবে।
জাওয়াব: যাকাত তো রবীউল আউয়াল শরীফ এর সাথে সম্পর্ক না। দিতে পারে ফযীলতের কারণে। রবীউল আউয়াল শরীফ এর সবটাই ফযীলত। তবে বছরটা ফিক্সড করতে হবে। তাহলে ১লা রবীউল আউয়াল শরীফ করতে পারে। তারিখটা ফিক্সড করতে হবে। অনির্দিষ্ট থাকলে হবেনা। বছর পূর্ণ করে সে অনুযায়ী সে যাকাত আদায় করবে।
জাওয়াব : নিছাবের মালিক হয়ে এক বছর পূর্ণ হলেই যাকাত দিতে হয়। যখন বা যেদিন যাকাত-এর নিছাবের এক বছর পূর্ণ হবে সেদিন তার নিকট (নিত্যপ্রয়োজনীয় টাকা ব্যতীত) যত টাকা থাকবে অর্থাৎ নিছাবের সাথে যত টাকাই সংযুক্ত হোক না কেন, সমস্ত টাকারই যাকাত আদায় করতে হবে যদিও কতক টাকা যাকাতদাতার হস্তগত হওয়ার পর এক বছর অতিবাহিত হয়নি তা সত্ত্বেও।
জাওয়াব : নেছাব সম্পন্ন ব্যক্তিযত বছর যাকাত আদায় করেনি; হিসাব করে তত বছরেরই যাকাত তাকে আদায় করতে হবে। কারণ যাকাত হচ্ছে ফরযের অন্তর্ভুক্ত। আর ফরযের ক্বাযা আদায় করাও ফরয। বর্তমানে যে সময়ে সে ব্যক্তি যাকাত আদায় করবে সে সময়ের স্বর্ণের মূল্য অনুযায়ী বিগত সমস্ত বছরের যাকাত আদায় করতে হবে। উল্লেখ্য, বিগত বছরগুলিতে তার যে পরিমাণ সম্পদ ছিলো তা হিসাব করে যাকাত আদায় করতে হবে।
যাকাত কাদেরকে দিতে হবে, এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কালাম পাকে ইরশাদ করেন-
انما الصدقات للفقراء والمسكين والعملين عليها والمؤلفة قلوبهم وفى الرقاب والغرمين وفى سبيل الله وابن السبيل فريضة من الله والله عليم حكيم.
অর্থ: “নিশ্চয়ই ছদকা তথা যাকাত ফকির, মিসকীন, যাকাত আদায়কারী কর্মচারী, নও মুসলিম, গোলামদের আযাদকার্যে, ঋণগ্রস্ত, জিহাদে লিপ্ত ব্যক্তি এবং মুসাফিরের জন্য। এটা আল্লাহ পাক-উনার পক্ষ থেকে নির্ধারিত। আর আল্লাহ পাক সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়।” (সূরা তওবা-৬০) মূলত, এ আয়াত শরীফ-এর দ্বারাই যাকাত প্রদানের ৮টি খাত নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। আর যেহেতু যাকাত প্রদানের সব খাতগুলি একইসাথে পাওয়া সম্ভব নয়, সেহেতু যে কোনো একটি খাতে যাকাত প্রদান করলেই যাকাত আদায় হয়ে যাবে। এটাই ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অভিমত। উল্লেখ্য যে, বর্তমানে যেহেতু দেশে খিলাফত কায়িম নেই ফলে যাকাত বায়তুল মালেও জমা দেয়া হচ্ছে না এবং কুরআন শরীফে উল্লিখিত সর্বপ্রকার খাতও পাওয়া যাচ্ছে না। আর অনেক যাকাতদাতার গরিব আত্মীয়-স্বজন ও গরিব প্রতিবেশী রয়েছে এবং অনেক মাদরাসা রয়েছে যেখানে ইয়াতিমখানাও আছে। তাই যাকাত দেয়ার সহজ ও উত্তম পদ্ধতি হলো- যাকাতের মালকে তিনভাগ করে একভাগ গরিব আত্মীয়-স্বজন, একভাগ গরিব প্রতিবেশী ও একভাগ মাদরাসার ইয়াতিমখানায় প্রদান করা। আর যদি গরিব আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশী না থাকে, তবে সবটাই মাদরাসার ইয়াতিমখানায় দেয়া আফযল ও উত্তম। তবে এক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয় যে, উলামায়ে সূ’ বা ধর্মব্যবসায়ী মাওলানা দ্বারা পরিচালিত মাদরাসা অর্থাৎ যারা মৌলবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও অন্যান্য কুফরী মতবাদের সাথে সম্পৃক্ত সেই সমস্ত মাদরাসাতে যাকাত প্রদান করলে যাকাত আদায় হবে না। স্মরণীয় আফযালুল আওলিয়া, ক্বাইয়ূমে আউয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, যাকাত, ফিতরা ইত্যাদি সর্বপ্রকার দান-ছদকা অন্যান্য খাতে না দিয়ে কোনো মাদরাসার ইয়াতীম, গরিব ছাত্রদেরকে দান করলে অন্যান্য খাতের চেয়ে লক্ষ্যগুণ ছওয়াব বেশি হবে। কারণ তাদের ইলমে দ্বীন অর্জনের সহায়তা করা হয়। হ্যাঁ, এ তিন প্রকার ব্যতীত যদি কুরআন শরীফে উল্লেখিত যাকাতের হক্বদারদের মধ্যে আরো কাউকে পাওয়া যায়, তবে তাদেরকেও যাকাত দিয়ে কুরআন শরীফ-এর উপর আমল করা উত্তম। (সমূহ ফিক্বহ্রে কিতাব)
জাওয়াব: নিজের পিতা, দাদা, পুত্র, নাতি, স্ত্রী, স্বামী ইত্যাদি পরস্পর পরস্পরকে যাকাত দিতে পারবে না। তবে পুত্রবধূ, জামাতা, বিমাতা, স্ত্রীর অন্য ঘরের সন্তান অথবা স্বামীর অন্যান্য স্ত্রীর সন্তানদেরকে যাকাত দেয়া যায়। আর পিতা-মাতা যদি অভাবগ্রস্ত হয়, তবে হিলা করে তাদেরকে যাকাতের টাকা দেয়া জায়িয, তবে তা মাকরূহ্। অনুরূপভাবে হিলা করে নিজের সন্তানকেও যাকাত দেয়া মাকরূহের সাথে জায়িয। (দুররুল মুখতার, রদ্দুল মুহতার, আলমগীরী)
জাওয়াব: যাকাতের টাকা মসজিদ, মাদরাসা ও কাফন-দাফনের কাজে ব্যবহার করতে পারবে না। তবে মাদরাসার লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে ব্যবহার করতে পারবে। কারণ যাকাতের টাকা গরিব-মিসকীনের হক্ব। যদি তা মসজিদ, মাদরাসা বা কাফন-দাফনের কাজে ব্যবহার করতে চায়, তবে প্রথমে উক্ত টাকা কোনো গরিব-মিসকীনকে দান করে তাকে এর মালিক করে দিবে। অতঃপর সে ব্যক্তি তা মসজিদ-মাদরাসা অথবা কাফন-দাফনের জন্য দান করে দিবে। তখন তা উক্ত কাজে ব্যবহার করতে পারবে। অন্যথায় তা ব্যবহার করা জায়িয হবে না। এরূপক্ষেত্রে যাকাতদাতা ও উক্ত মিসকীন ব্যক্তি উভয়ই সমান সওয়াব পাবে। হাদীছ শরীফ-এ হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “শত হাত ঘুরেও যদি কোনো দান-ছদ্কা করা হয়, তাতে প্রত্যেকেই সমান ছওয়াব লাভ করবে।” (রদ্দুল মুহ্তার)
জাওয়াব: ধনী লোকের নাবালিগ সন্তানকে যাকাত দেয়া জায়িয নেই। কিন্তু ধনী লোকের বালিগ সন্তান যদি ফকির হয়, তাহলে তাকে যাকাত দেয়া জায়িয। এমনকি ধনী লোকের স্ত্রী ও পিতা যদি নিছাবের মালিক না হয়, তবে তাদেরকেও যাকাত দেয়া জায়িয আছে। আর পিতৃহীন শিশুর মাতা যদি নিছাবের মালিকও হয়, তবে সে শিশুকে যাকাত দেয়া জায়িয আছে। (দুররুল মুখতার, আলমগীরী, জাওহারাতুন্ নাইয়্যারা)
জাওয়াব: ধর্মব্যবসায়ীদের মাদ্রাসাতে তথা সন্ত্রাসী তৈরিকারী মাদ্রাসাগুলোতে যাকাত ও ফিতরা দিলে তা আদায় হবে না। যাকাত ও ফিতরা দেয়ার উত্তম স্থান হলো ‘মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ’। যাকাত ইসলামের পাঁচটি বুনিয়াদের মধ্যে অন্যতম বুনিয়াদ; যা ফরয। কাজেই যাকাত দেয়ার সাথে সাথে তা কাকে বা কোথায় দিতে হবে সেটিও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। স্মরণীয় যে, শুধু কাফির সম্প্রদায়ই নয়, মুসলমান নামধারী অনেক মাওলানা, শাইখুল হাদীছ, মুফতী, মুফাসসির, খতীব তথা অনেক ইসলামী দলও রয়েছে যাদের মূলত মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে আক্বীদা খারাপ রয়েছে। কাজেই তারা মুসলমান নামধারী হলেও তারা মুসলমানের অন্তর্ভুক্ত নয়। তারা ইসলামী দল নামধারী হলেও আসলে তারা ইসলামী দলের অন্তর্ভুক্ত নয়। উল্লেখ্য, ইসলামে মৌলবাদ, সন্ত্রাসবাদ, ফিতনা ফাসাদ হারাম। ইসলামের নামে ব্যবসা করা হারাম। ইসলামের নামে গণতান্ত্রিক দল করা হারাম। ইসলামের নামে নির্বাচন করা হারাম। ইসলামের নামে ভোট চাওয়া হারাম। আরো উল্লেখ্য, বর্তমানে অধিকাংশ মাদ্রাসাগুলোই হচ্ছে জামাতী, ওহাবী, খারিজী, দেওবন্দী মতাদর্শের তথা সন্ত্রাসী তৈরির সূতিকাগার। ইসলামের দোহাই দিয়ে, ইসলামের নামে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক স্বার্থ ও প্রতিপত্তি হাছিলের কেন্দ্র। ইসলামের নামে নির্বাচন করার ও ভোটের রাজনীতি করার পাঠশালা- যা ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম। কাজেই, যাকাত-ফিতরা কোথায় দেয়া হচ্ছে তা দেখে দিতে হবে। জামাতী, খারিজী, ওহাবী ও সন্ত্রাসী-মৌলবাদী তথা ধর্মব্যবসায়ীদের মাদ্রাসাতে যাকাত-ফিতরা দিলে তা কস্মিনকালেও আদায় হবে না। এ কারণে বর্তমান হিজরী শতাব্দীর মুজাদ্দিদ, যামানার মুজতাহিদ ও ইমাম, ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্ইস্ সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, হুজ্জাতুল ইসলাম, সাইয়্যিদুল আওলিয়া, আওলাদে রসূল, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বলেছেন, বর্তমানে হক্ব মত-পথ ও সুন্নতী আমলের একমাত্র ও উৎকৃষ্ট উদাহরণ হলো, ‘মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ’। কাজেই, যাকাত-ফিতরা বা কুরবানীর চামড়া দিয়ে যারা ছদকায়ে জারীয়ার ছওয়াব হাছিল করতে চায় তাদের জন্য একমাত্র ও প্রকৃত স্থান হলো ‘মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ’ রাজারবাগ, ঢাকা।
জাওয়াব: ইসলামের নামে যারা গণতন্ত্রভিত্তিক আন্দোলন করে তাদের এ আন্দোলনের জন্য যাকাত, ফিতরা, উশর ইত্যাদি প্রদান করলে তা আদায় হবে না বরং প্রদাণকারী দুই দিক থেকে গুনাহগার হবে। একদিক হলো কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ অনুযায়ী যাকাত, ফিৎরা, উশর ইত্যাদি আদায় করলো না। আরেকদিক হলো তারা যাকাত, ফিৎরা ও উশর ইত্যাদি আদায় না করার গুনাহে গুনাহগার হলো। এবং এজন্য প্রদানকারী কোনো ছওয়াব পাওয়ার তো প্রশ্নই উঠে না। কারণ, যারা গণতন্ত্রভিত্তিক আন্দোলন করে তাদের আন্দোলন ইসলামের বোল-বালা, প্রচার-প্রসার বা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য নয়; বরং তাদের আন্দোলন হচ্ছে গণতন্ত্র অর্থাৎ কুফরী মতবাদকেই প্রতিষ্ঠা করা। নাউযুবিল্লাহ! অতএব, তাদের সে আন্দোলন জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ নয়; বরং তাদের সে আন্দোলন জিহাদ ফী সাবীলিশ শয়তান। প্রকৃতপক্ষে তারা জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ’র নামে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়ে যাচ্ছে। তাদের এ ধোঁকা থেকে সাবধান সতর্ক হওয়া উচিত। অতএব, যে গণতন্ত্র ইসলামের নামে করা সম্পূর্ণ হারাম এবং এটাকে জায়িয মনে করা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত; সেই গণতন্ত্রের জন্য যাকাত, ফিতরা, উশর ইত্যাদি প্রদান করলে তা কস্মিনকালেও আদায় হবে না; বরং কবীরা গুনাহ ও কুফরী হবে। এ বিষয়ে দলীল-আদিল্লাহসমূহ জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত ৮৪ ও ৯০তম সংখ্যা পাঠ করুন।
জাওয়াব: কম দামের খদ্দরের লুঙ্গি ও পাতলা শাড়ি কাপড় যাকাত হিসেবে দিলে যাকাত কস্মিনকালেও আদায় হবে না। কারণ শরীয়ত তথা কুরআন ও সুন্নাহর ফতওয়া হলো যেটা সবচেয়ে ভালো, পছন্দনীয় ও মূল্যবান সেটাই দান করতে হবে। আর যেটা খারাপ, নি¤œমানের ও নি¤œমূল্যের সেটা দান করা যাবে না। অর্থাৎ যাকাত তথা দান-ছদকার বস্তু যেমন হালাল হওয়া শর্ত তেমনি তা উৎকৃষ্ট ও সবচেয়ে মূল্যবান হওয়াও শর্ত। অন্যথায় তা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট আদৌ কবুলযোগ্য নয়। মহান আল্লাহ পাক তিনি তা পরিষ্কার কালাম পাকে জানিয়ে দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে-
لن تنالوا البر حتى تنفقوا مما تحبون. وما تنفقوا من شىء فان الله به عليم. অর্থ: তোমরা কখনই নেকী, কল্যাণ হাছিল করতে পারবে না, যে পর্যন্ত না তোমরা তোমাদের প্রিয় বা পছন্দনীয় বস্তু দান করবে। এবং তোমরা যা কিছু দান করো সে সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক অবশ্যই পূর্ণ খবর রাখেন। (সূরা আলে ইমরান : আয়াত শরীফ-৯২)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ করেন-
يايها الذين امنوا انفقوا من طيبت ما كسبتم ومما اخرجنا لكم من الارض ولا تيمموا الخبيث منه تنفقون ولستم باخذيه الا ان تغمضوا فيه واعلموا ان الله غزيز حميد.
অর্থ: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা স্বীয় উপার্জন থেকে এবং আমি তোমাদের জন্য ভূমি থেকে যা উৎপন্ন করেছি তা থেকে উৎকৃষ্ট বস্তু ব্যয় করো এবং নিকৃষ্ট জিনিস ব্যয় করতে নিয়ত বা মনস্থ করো না। কেননা তোমরা তা অনিচ্ছাকৃত ব্যতীত গ্রহণ করবে না। জেনে রাখ, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি অভাবমুক্ত, প্রশংসিত।” (সূরা বাক্বারা: আয়াত শরীফ-২৬৭) এখানে সম্পদের যাকাত, ফিতরা ও জমির ফসলের উশর ইত্যাদি ফরয, ওয়াজিব, নফল সকল প্রকার দান-ছদক্বার কথাই বলা হয়েছে। অর্থাৎ যেটা উত্তম উৎকৃষ্ট, মূল্যবান সেটাই দিতে হবে। যেটা নিকৃষ্ট, নি¤œমানের, নি¤œমূল্যের সেটা দেয়া তো দূরের কথা সেটা দেয়ার কল্পনা বা চিন্তা করাও যাবে না। কেননা খারাপটা কেউই গ্রহণ করতে চায় না। তাহলে মহান আল্লাহ পাক তিনি সেটা কি করে গ্রহণ করবেন। এখন কেউ যদি চোখ বন্ধ করে নিজের খেয়াল খুশি মতো সেটা দিয়ে দেয় সেক্ষেত্রে মহান আল্লাহ পাক তিনি জানিয়েছেন দেখো, মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদের এসব দানের মুখাপেক্ষী নন। তিনি গণী বা অভাবমুক্ত এবং হামীদ বা চরম প্রশংসিত। অতএব, যেটা সবচেয়ে ভালো, পছন্দনীয় ও মূল্যবান সেটাই যাকাত হিসেবে দান করতে হবে। অন্যথায় তা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট আদৌ কবুলযোগ্য হবে না। (সমূহ হাদীছ, তাফসীর ও ফিক্বাহর কিতাব দ্রষ্টব্য)